বাংলাদেশের লঙ্কা জয়
আপলোড সময় :
১৭-০৭-২০২৫ ১১:৩৭:১০ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০৭-২০২৫ ১১:৩৭:১০ পূর্বাহ্ন
সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি- কোনও ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বাদ ছিল না। মাঝেমধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন জয় মিলেছে। এবারও শুরুটা হয়েছিল হতাশায় মোড়ানো, ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। তবে শেষটা হলো রূপকথার মতো। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে লঙ্কানদের উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতায় আজ সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচেও শ্রীলঙ্কাকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিলেন লিটন-মেহেদীরা। টানা দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশ গড়ে ফেললো নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো লঙ্কার মাটিতে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসলো তারা।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম এমনিতেই বাংলাদেশের জন্য পয়মন্ত। এর আগেও এখানে একাধিক ম্যাচ জিতেছে তারা। নিদাহাস ট্রফিতে ২১৪ রান তাড়া করে জয়ের ইতিহাস তো এই মাঠেই। অতীতের অনুপ্রেরণা নিয়েই হয়তো লিটনরা আজ মাঠে নেমেছিলেন! প্রেমাদাসার উইকেটে পরে ব্যাটিং করাই বেশি নিরাপদ। তারপরও লঙ্কানরা টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলো। তাদের সিদ্ধান্তটা ভুল প্রমাণ করতেই বোধহয় বাংলাদেশ সাঁড়াশি আক্রমণে নামে। কোনোমতে বাংলাদেশকে ১৩২ রানের লক্ষ্য তুলে দিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিকরা। সহজ এই লক্ষ্যটা ২১ বল আগে ৮ উইকেট হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেন লিটনরা।
অনেক অপেক্ষার পর আজ এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এটা শুধু লঙ্কানদের মাটিতেই প্রথম সিরিজ জয় নয়, সবমিলিয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়। দেশে ও দেশের বাইরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পরস্পরের বিপক্ষে চারটি একাধিক ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে। এর মধ্যে তিনবারই সিরিজ জিতেছে লঙ্কানরা। একবার দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র হয়েছিল।
ইতিহাস গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশে দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। মেহেদী হাসান মিরাজের বদলে একাদশে ফেরানো হয় শেখ মেহেদী হাসানকে। এছাড়া সাইফউদ্দিনের বদলে নামানো হয় তানজিম হাসান সাকিবকে। দুই ম্যাচে ড্রেসিরুমে বসে থাকা মেহেদী একাদশে সুযোগ পেয়েই দেখালেন তার ঘূর্ণিজাদু। দ্বিতীয় ওভারেই তিনি জ্বলে উঠলেন। অফস্পিনের ধারালো ডেলিভারিতে স্লিপে তানজিদের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরালেন কুশল পেরেরাকে (০)। এরপর আর থেমে থাকেননি। চতুর্থ ওভারে আবার ফিরিয়ে দিলেন দিনেশ চান্ডিমালকে, মাত্র ৫ বল খেলে ৪ রান করেই ফিরতে হয় তাকে। শ্রীলঙ্কা যখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখন হানা দিলেন শামীম হোসেন। তানজিমের আগের ওভারে চার–ছক্কা মারা কামিন্দু মেন্ডিস (১৫ বলে ২১ রান) রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন তানজিমের হাতেই। একে একে মেহেদী তুলে নেন ৪ উইকেটে। মাত্র ১১ রানে চার উইকেট নিয়ে তিনিই মূলত লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন। তার সঙ্গে পার্শ্ব ভূমিকাতে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও শামীম। তারা দুইজনও লঙ্কান ব্যাটারদের চাপে রাখতে পেরেছেন।
স্বাগতিকদের ১৩২ রান হতো না। কিন্তু শেষ ওভারে শানাকার ব্যাটে উঠলো ঝড়। তাণ্ডবের সেই ওভারে শরিফুল ইসলাম দিলেন ২২ রান। আর তাতেই লঙ্কানরা তুলে ফেলে ১৩২ রান। প্রেমাদাসার উইকেটে ১৩৩ রানে কঠিন কিছুই না। তবে প্রথম বলেই পারভেজ হোসেন ইমন গোল্ডেন ডাক মেরে চাপে ফেলে দেন গোটা দলকে। যদিও সেই চাপ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন অধিনায়ক লিটন, এসেই ফ্লিক শটে বাউন্ডারি আদায় করে নেন। পাওয়ার প্লেতে তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন মিলে ৪৭ রান তুলে বড় প্রতিরোধ গড়েন। দলী ৭৪ রানের মাথায় জুটি ভাঙে তাদের। সুইপ শট খেলতে গিয়ে কামিন্দুর শিকার হন লিটন। আউট হওয়ার আগে খেলেন ২৬ বলে ৩২ রানের ইনিংস।
লিটন আউট হওয়ার পর আর কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। জুনিয়র তামিম ও তাওহীদ হৃদয় মিলে অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রান করে ১৬.৩ ওভারেই দলের জয় নিশ্চিত করেন। আজ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন তানজিদ। শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ১ চার ও ৬ ছক্কায় নিজের ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটি সাজান। তার সঙ্গী হৃদয় ২৫ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন।
আজ ব্যাটিংয়ে অনেক দিন পর হাসি ফোটাল বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন মেহেদী। লঙ্কানদের বিপক্ষে এই অফস্পিনার যেন হঠাৎ আলোকবর্তিকা! দুই ম্যাচে বেঞ্চে বসে থাকার পর সুযোগ পেয়ে সেটিকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। তার সাফল্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে দীর্ঘদিন ব্যর্থতায় থাকা ব্যাটিং লাইনআপের ঘুরে দাঁড়ানো। তানজিদের ঝলমলে ইনিংস, লিটনের ধারাবাহিকতা- সব মিলিয়ে সিরিজ শেষে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে স্বস্তির ছোঁয়া। বিশেষ করে সামনে যখন কঠিন পাকিস্তান সিরিজ, তখন এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্স দলকে দেবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। সঙ্গে তো থাকছেই লঙ্কান দুর্গ জয়ের প্রেরণা।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স